🔶 জ্বর ও খিচুনি: শিশুর জীবনে একটি সাধারণ কিন্তু ভীতিকর সমস্যা
ছোট শিশুদের মধ্যে জ্বর একটি খুবই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে অনেক সময় এই জ্বর থেকেই দেখা দিতে পারে জ্বরজনিত খিচুনি বা Febrile Seizure, যা অনেক বাবা-মায়ের কাছে অত্যন্ত ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ করে শিশুর শরীর ঝাঁকুনি দেওয়া, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলা – এসব লক্ষণ দেখে যে কেউ আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন।
যদিও জ্বরের কারণে হওয়া বেশিরভাগ খিচুনি গুরুতর নয় এবং সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমস্যা তৈরি করে না, তবুও সচেতনতা ও তাৎক্ষণিক সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
🔍 খিচুনি কী এবং কেন হয়?
জ্বরজনিত খিচুনি মূলত ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ঘটে। হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যার ফলে খিচুনি হয়। খিচুনির সময় শিশুর শরীর শক্ত হয়ে যায়, হাত-পা কাঁপে, চোখ উল্টে যেতে পারে এবং সে কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারাতে পারে।
⚠️ খিচুনি হলে করণীয়
১. ঘাবড়ে যাবেন না: খিচুনির সময় অনেক বাবা-মা আতঙ্কে পড়ে যান। তবে প্রথম করণীয় হলো নিজেকে শান্ত রাখা।
২. শিশুকে নিরাপদে শুইয়ে দিন: শিশুকে নরম ও সমতল জায়গায় বাম পাশে শুইয়ে দিন, যেন সে সহজে শ্বাস নিতে পারে।
৩. মুখে কিছু দেবেন না: খিচুনির সময় শিশুর মুখে পানি, খাবার, ওষুধ বা কোনো বস্তু দেবেন না। এতে শিশুর শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৪. সময় লক্ষ্য করুন: খিচুনি কয় মিনিট ধরে হচ্ছে তা খেয়াল রাখুন। এটি যদি ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়, তবে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: প্রথমবার খিচুনি হলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। শিশুর শারীরিক পরীক্ষা ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
✅ খিচুনি প্রতিরোধে যা করবেন
শিশুর জ্বর হলে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপুন।
শরীর ঠান্ডা রাখতে হালকা জামা পরান।
প্যারাসিটামল জাতীয় জ্বরের ওষুধ দিন (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)।
পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দিন।
🧠 বিশেষ পরামর্শ
“জ্বর থেকে খিচুনি ভয়াবহ মনে হলেও, এটি সাধারণত ক্ষণস্থায়ী ও নিরীহ। কিন্তু বারবার খিচুনি হলে অবশ্যই স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
🖼️ চিত্র: খিচুনি হলে করণীয়
ছবির উৎস: শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচারপত্র
🔚 শিশুদের বিশেষ গুরুত্ব
শিশুর জ্বর ও খিচুনি একটি অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হলেও, এটি সচেতনতার মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ ও চিকিৎসা নিলে শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই ভয় নয়, সচেতনতাই হোক আপনার শক্তি।
মোঃ মাহমুদুর নবী ( আসলাম)
প্যারামেডিকেল, রেজিঃ নং-১৯৭৪৯৬
মেডিসিন,গাইনী, সার্জারি,মা ও শিশুর রোগ এবং ডেন্টাল মেডিসিনে অভিজ্ঞ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি এবং আলট্রাসনোগ্রাফি (বি মটু), রংপুর।