শিশুদের জ্বর: সাধারণ পরিচিতি
শিশুর শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সাধারণত ৯৭°F থেকে ১০০.৪°F (৩৬.১°C – ৩৮°C) এর মধ্যে থাকে। যখন এটি ১০০.৪°F (৩৮°C) এর বেশি হয়, তখন ধরে নেওয়া হয় শিশুর জ্বর হয়েছে। এটা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, টিকা গ্রহণ, দাঁত ওঠা অথবা হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
জ্বরের সাধারণ কারণসমূহ:
১. ভাইরাল সংক্রমণ: ঠান্ডা, ফ্লু, রোটা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ ২. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: কানের ইনফেকশন, গলা ব্যথা, নিউমোনিয়া, ইউরিন ইনফেকশন ৩. টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: টিকা দেওয়ার পর সাধারণত ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সামান্য জ্বর হতে পারে 4. দাঁত ওঠা: যদিও এটি প্রধান কারণ নয়, কিছু ক্ষেত্রে সামান্য জ্বর দেখা দিতে পারে
শিশু নিজের অসুস্থতার কথা বলতে পারে না, তাই কিছু লক্ষণ দেখে অভিভাবকদের বুঝতে হবে:
অতিরিক্ত কাঁদা বা বিরক্তিভাব
খাওয়া ও দুধপান না করা
ঘুমে ব্যাঘাত হওয়া বা অতিরিক্ত ঘুম
চোখ লাল হওয়া বা পানি পড়া
ত্বক গরম অনুভব করা
হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
শিশুর জ্বর হলে আগে আতঙ্কিত না হয়ে কিছু ধাপ মেনে চলা উচিত। নিচে ধাপে ধাপে করণীয়গুলো দেওয়া হলো:
১. শরীরের তাপমাত্রা মাপুন
ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা মেপে রাখুন। বগলে বা কানে থার্মোমিটার ব্যবহার করা নিরাপদ।
২. শিশুকে ঠান্ডা ও আরামদায়ক রাখুন
জ্বরের সময় অতিরিক্ত কম্বল বা মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবেন না। হালকা কাপড় পরান এবং ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখুন।
৩. প্রচুর পানি ও তরল খাবার দিন
জ্বরের সময় শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। শিশুকে বেশি করে দুধ, পানি, স্যুপ বা ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) দিন।
৪. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল দিন
শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শে প্যারাসিটামল সিরাপ (যেমন ক্যালপল, ফেভারেক্স) ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. হালকা গরম পানি দিয়ে স্পঞ্জিং করুন
একটি পাতলা তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে শরীর মুছে দিন। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৬. পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন
শিশুদের জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন।
শিশুর জ্বর কিছু সময়ের জন্য সাধারণ হলেও, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণ নেওয়া জরুরি:
৩ মাসের কম বয়সী শিশু যদি জ্বরে আক্রান্ত হয়
জ্বর ১০৪°F (৪০°C) এর বেশি হলে
৩ দিনের বেশি জ্বর স্থায়ী হলে
বাচ্চা খাওয়া বন্ধ করে দিলে
খিঁচুনি শুরু হলে
শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস দেখা দিলে
জ্বরের সময় যেসব কাজ করা যাবে না
নিজের মতো করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না
শিশুকে অতিরিক্ত ঢেকে রাখা যাবে না
ঠান্ডা পানি বা বরফ ব্যবহার করা ঠিক নয়
জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
শিশুদের জ্বর থেকে রক্ষা করতে নিচের সতর্কতাগুলো অনুসরণ করুন:
শিশুকে সময়মতো টিকা দিন
তার আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখুন
শিশু যাতে পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার পায় তা নিশ্চিত করুন
মোঃ মাহমুদুর নবী ( আসলাম)
প্যারামেডিকেল, রেজিঃ নং-১৯৭৪৯৬
মেডিসিন,গাইনী, সার্জারি,মা ও শিশুর রোগ এবং ডেন্টাল মেডিসিনে অভিজ্ঞ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি এবং আলট্রাসনোগ্রাফি (বি মটু), রংপুর।