শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
শিশুরা নিজেদের অসুবিধা মুখে প্রকাশ করতে পারে না, তাই পেটের সামান্য সমস্যাও অনেক সময় বড় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত সমস্যা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এটি শিশুর স্বাভাবিক মলত্যাগে সমস্যা তৈরি করে এবং সময়মতো প্রতিকার না নিলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এই ব্লগে আমরা জানবো শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া ও চিকিৎসাসম্মত প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কী?
কোষ্ঠকাঠিন্য হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে শিশুর মলত্যাগ অনিয়মিত হয়ে পড়ে, মল শক্ত বা শুষ্ক হয়ে যায় এবং মলত্যাগের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি হয়।
সাধারণভাবে, যদি কোনো শিশু তিন দিনের বেশি সময় মলত্যাগ না করে বা মলত্যাগ করতে কষ্ট হয়, তবে সেটিকে কোষ্ঠকাঠিন্য ধরা হয়।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ
১. খাদ্যাভ্যাসে হঠাৎ পরিবর্তন
বুকের দুধ থেকে গুঁড়ো দুধে বা সলিড খাবারে পরিবর্তন হলে শিশুর পাচনতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।
অধিক প্রক্রিয়াজাত বা আঁশবিহীন খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে।
২. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
অনেক সময় শিশুদের পর্যাপ্ত পানি না দিলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, যার ফলে মল শক্ত হয়ে যায়।
৩. গুঁড়ো দুধ বা দুধের অতিরিক্ত গ্রহণ
শিশু যদি বেশি পরিমাণ গরুর দুধ বা গুঁড়ো দুধ গ্রহণ করে এবং তা হজম না হয়, তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৪. চলাফেরা বা শারীরিক কার্যকলাপ কম হওয়া
বড় শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক কার্যকলাপ কম হলে হজম শক্তি কমে যায় এবং পেটের গতি স্লো হয়ে পড়ে।
৫. মনস্তাত্ত্বিক কারণ
ভয়, উদ্বেগ কিংবা টয়লেটের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব থেকেও শিশুরা মল আটকে রাখে, যা পরবর্তীতে কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনাকে নিচের লক্ষণগুলো বুঝে নিতে হবে:
শিশুর সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করা
মল শক্ত ও বড় আকারের হওয়া
মলত্যাগের সময় কান্না বা বিরক্তি
পেট ফেঁপে থাকা বা অস্বস্তি
মলের সঙ্গে হালকা রক্ত আসা (অতিরিক্ত চাপের কারণে)
খাওয়ার প্রতি অনীহা
মল আটকে রাখার লক্ষণ (বারবার পায়খানা আটকে রাখার চেষ্টা)
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিকারে করণীয়
১. আঁশযুক্ত খাবার দিন (বয়স অনুযায়ী)
ছয় মাসের পর শিশুকে বিভিন্ন ফলমূল যেমন পেঁপে, নাশপাতি, কলা ও শাকসবজি খাওয়াতে শুরু করুন।
ডাল, লাউ, পালং শাক হজমে সহায়ক।
২. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার
বুকের দুধের পাশাপাশি বয়স অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি ও স্যুপ খাওয়ান।
সেদ্ধ ফলের রস বা পাতলা ভাতের মাড়ও উপকারী।
৩. নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস গড়ুন
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে শিশুকে পটি চেয়ারে বসাতে চেষ্টা করুন।
ভয় না দেখিয়ে খেলা বা গল্পের মাধ্যমে অভ্যাস গড়ুন।
৪. শরীরচর্চা বা হালকা ব্যায়াম
শিশুদের পা বাইসাইকেলের মতো নাড়ানো, পেট ম্যাসাজ করা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
৫. মাসাজ ও গরম পানির স্নান
শিশুর পেটের চারদিকে হালকা চাপ দিয়ে গোল করে ম্যাসাজ করলে অন্ত্র সচল হয়।
হালকা গরম পানিতে গোসল দিলে শিশুর পেশি শিথিল হয় এবং মলত্যাগ সহজ হয়।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
মলের সঙ্গে বারবার রক্ত আসছে
শিশুর পেট অতিরিক্ত ফুলে যাচ্ছে বা বমি হচ্ছে
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মলত্যাগে সমস্যা হচ্ছে
ওষুধ ছাড়া মলত্যাগ সম্ভব হচ্ছে না
চিকিৎসক প্রয়োজন হলে বয়স ও ওজন অনুযায়ী ল্যাক্সেটিভ বা বিশেষ সাপোজিটরি দিয়ে থাকেন। তবে এগুলো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ঘরোয়া কিছু উপায় (৬ মাসের পর শিশুদের জন্য)
এক চামচ সেদ্ধ করা খেজুরের জল শিশুকে ছেঁকে খাওয়ানো
হালকা গরম পানি দিয়ে শিশুর পেট ধোয়া
সামান্য অলিভ অয়েল (ডাক্তারের পরামর্শে)
কী করা থেকে বিরত থাকবেন?
বড়দের ওষুধ বা ঘরোয়া টোটকা শিশুর ওপর প্রয়োগ করবেন না
মলত্যাগে ব্যর্থ হলে শিশুকে বকা দেবেন না
বারবার এনিমা বা সাপোজিটরি ব্যবহার করবেন না
শিশুর খাওয়ার রুটিন হঠাৎ করে বদলাবেন না
উপসংহার
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণ কিন্তু সময়মতো প্রতিকার না নিলে এটি শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। খাদ্যাভ্যাস, তরল গ্রহণ, দৈনন্দিন অভ্যাস এবং সময়মতো সচেতনতা — এই চারটি মূল দিকেই যত্ন নিলে সহজেই এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অভিভাবকদের উচিত শিশুর মলত্যাগের নিয়মিততা খেয়াল রাখা এবং কোনো ব্যতিক্রম হলে দ্রুত প্রতিকার নেওয়া। প্রয়োজন হলে শিশুর পেডিয়াট্রিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
শিশুরা নিজেদের অসুবিধা মুখে প্রকাশ করতে পারে না, তাই পেটের সামান্য সমস্যাও অনেক সময় বড় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত সমস্যা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এটি শিশুর স্বাভাবিক মলত্যাগে সমস্যা তৈরি করে এবং সময়মতো প্রতিকার না নিলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
মোঃ মাহমুদুর নবী ( আসলাম)
প্যারামেডিকেল, রেজিঃ নং-১৯৭৪৯৬
মেডিসিন,গাইনী, সার্জারি,মা ও শিশুর রোগ এবং ডেন্টাল মেডিসিনে অভিজ্ঞ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি এবং আলট্রাসনোগ্রাফি (বিমটু), রংপুর।