শিশুর ডায়রিয়া হলে কি করবেন: লক্ষণ, প্রতিকার এবং চিকিৎসা
শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি বিশেষ করে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায়। সময়মতো প্রতিকার না নিলে ডায়রিয়া মারাত্মক আকার নিতে পারে, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। তাই প্রতিটি অভিভাবকের উচিত ডায়রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা, কারণ, লক্ষণ চিনে রাখা এবং তাৎক্ষণিক সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।
—
ডায়রিয়ার লক্ষণ
শিশুর ডায়রিয়া শুরু হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
বারবার পানির মতো বা পাতলা পায়খানা হওয়া
বমি বা বমির ভাব
পেট মোচড়ানো বা ব্যথা
শিশুর খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়া
চোখ বসে যাওয়া ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া
দুর্বলতা ও অস্বাভাবিক ঘুমঘুম ভাব
জ্বর থাকা
প্রস্রাব কমে যাওয়া বা না হওয়া
এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক দেখা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
—
সম্ভাব্য কারণ
শিশুর ডায়রিয়া হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে, যেমন:
ভাইরাসজনিত সংক্রমণ (বিশেষ করে রোটা ভাইরাস)
ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
অপরিষ্কার খাবার বা দূষিত পানি খাওয়া
অতিরিক্ত ফল বা দুধজাত খাবার খাওয়ানো
অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ফুড অ্যালার্জি বা হজম সমস্যা
—
ঘরোয়া প্রতিকার ও করণীয়
১. ওরস্যালাইন দিন
শিশুর শরীর থেকে পানির ঘাটতি পূরণে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওরস্যালাইন খাওয়ান। এটি জীবনের জন্য রক্ষাকবচ।
2. জিঙ্ক ট্যাবলেট খাওয়ান
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১০-১৪ দিন পর্যন্ত জিঙ্ক খাওয়ালে ডায়রিয়ার সময়কাল ও তীব্রতা কমে।
3. বুকের দুধ চালিয়ে যান
যে শিশুর বয়স ৬ মাসের নিচে, তাকে নিয়মিত বুকের দুধ দিতে থাকুন।
4. পর্যাপ্ত পানি ও তরল দিন
ডাবের পানি, ভাতের মাড়, স্যুপ ইত্যাদি তরল খাবার দিন, যাতে পানিশূন্যতা রোধ হয়।
5. সহজপাচ্য খাবার খাওয়ান
খিচুড়ি, সেদ্ধ আলু, কলা ও দই ইত্যাদি হালকা খাবার শিশুর জন্য উপকারী।
6. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
শিশুর খাবার, হাত ও পাত্র সবসময় পরিষ্কার রাখুন। রান্নার আগে ও বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে হাত ধুয়ে নিন।
—
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
ডায়রিয়া ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
পায়খানায় রক্ত বা অতিরিক্ত শ্লেষ্মা থাকলে
শিশুর খাওয়া-দাওয়া একেবারে বন্ধ হলে
বারবার বমি হলে
তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে (চোখ বসে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, চামড়া শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি)
এইসব পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
—
চিকিৎসা
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওরস্যালাইন, জিঙ্ক, প্রয়োজনে প্রোবায়োটিক বা অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে। তবে ডায়রিয়ার ৭০-৮০% ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ওরস্যালাইন ও জিঙ্কেই উন্নতি দেখা যায়।
—
উপসংহার
শিশুর ডায়রিয়া শুরু হলে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক খাবার দিয়েই অনেকাংশে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অভিভাবকদের উচিত, ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলেই গুরুত্ব দেওয়া এবং দেরি না করে প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।